Author: anilmohankar1941@gmail.com

শ্রী অনিল মোহন কর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, শ্রীরামকৃষ্ণ সেবাশ্রম, সীতাকুণ্ড, চট্টগ্রাম। ও সাবেক ডেপুটি ফাইনেন্সসিয়েল এডভাইজার এন্ড চীফ একাউন্টস অফিসার সিআরবি, বাংলাদেশ রেলওয়ে, চট্টগ্রাম।

ABOUT ME

শ্ৰীশ্ৰী দশমহাবিদ্যা মায়ের মাহাত্ম্য বর্ণনা করার অসীম সাহস এ অধমের নেই। তথাপি শ্ৰীশ্ৰী মায়ের আশীর্বাদে ও অপরিসীম কৃপায় যথাসাধ্য চেষ্টার কার্পণ্য করিনি। এ মায়ের লীলা ও শক্তির কথা আমাদের সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রত্যেকেই যাতে জানতে ও বুঝতে পেরে মায়ের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে পারেন তারই প্রচেষ্টা করা হয়েছে। কলিযুগে শ্রদ্ধার সঙ্গে অন্তরের অন্তস্তল হতে শ্ৰীশ্ৰী মহামায়া মাকে ভজন করলে মা ভক্তের মনােবাঞ্ছা পূর্ণ করেন বলে শাস্ত্ৰে উল্লেখ রয়েছে। শ্ৰীশ্ৰী মা সকল সন্তানকেই সমভাবে কোলে তুলে নেন। সেই সাহসে শ্ৰীশ্ৰী দশমহাবিদ্যা-মায়ের ভিন্ন ভিন্ন রূপ, একেক মায়ের পূজার ফলাফল এবং মাহাত্য বর্ণনা করা হল যেন মায়ের ভক্তবৃন্দ তার মাহাত্ম্য জেনে ক্রমশঃ বঙ্গদেশের সনাতনী সম্প্রদায়ের মাতৃভক্তরা উন্নত সাধন ভজনে ব্ৰতী হতে পারেন। কারণ আদ্যাস্তোত্ৰ মতে এ যুগে বঙ্গদেশে মা কালিকা দেবী জাগ্ৰতা । অল্প পরিশ্রমে শ্ৰীশ্ৰী মায়ের সাধন লাভ সহজ। প্রত্যহ মহাবিদ্যাস্ত্ৰোত্র পাঠে মুণ্ডমালাতন্ত্রোক্ত মহাবিদ্যাস্তোত্ৰম মতে মাকে লাভ আরও সহজতর।

লেখক
নিবেদক
শ্রী অনিল মহন কর
সাবেক ডেপুটি ফাইনেন্সসিয়েল এডভাইজার এন্ড চীফ একাউন্টস অফিসার
সিআরবি, বাংলাদেশ রেলওয়ে, চট্টগ্রাম।
মোবাইল ঃ ০১৯১৪-২৩৭৯১০, ফোন ঃ ০৩১-৬২২৬১৬



প্রজাপতি দক্ষ রাজা বিশ্ব স্রষ্টাদের যজ্ঞের আয়ােজন করছেন। সকল দেবগণ, মুনি ও ঋষিগণের উপস্থিতিতে যজ্ঞস্থল পরিপূর্ণ। এ সময়ে রাজা দক্ষ উপস্থিত হলে উপস্থিত সকলেই অভিবাদন জানাতে দীড়ালেন। কিন্তু ব্ৰহ্মা, বিষ্ণু ও শিব দাঁড়ালেন না। দক্ষ ভাবলেন ব্ৰহ্মা আমার পিতৃদেব, বিষ্ণু জগতের পালন কর্তা। কিন্তু শিব, আমার মেয়ে সতীর জামাতা অথচ শিব কেন দাঁড়াল না? নিজকে অসম্মানিত ভেবে শিব নিন্দা আরম্ভ করলেন। তবুও ক্ৰোধ দূর হল না। প্ৰজাপতি দক্ষ এর প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য শিবকে নিমন্ত্রণ না দিয়ে আবার বিরাট যজ্ঞের আয়োজন করে অন্যান্য সকলকে আমন্ত্রণ জানালেন। কন্যা সতীও এ আয়োজনে নিমন্ত্রণ পেলেন না। এ খবর নারদ সতীকে জানালে সতী বাপের বাড়ী যাওয়ার জন্য শিবের অনুমতি প্রার্থনা করলে শিব নিষেধ করলেন। কারণ শিব ও সতী কেউ নিমন্ত্রণ না পেয়ে যাওয়া উচিত নয় বলে শিব সতীকে অবহিত করলেন। প্রতি উত্তরে সতী বিনা নিমন্ত্রণে কন্যার বাপের বাড়ী যাওয়া অন্যায় হবে না বলে “আমি যাবই যাব।’ এমন বাক্য শিবের প্রতি প্রয়োগ করলেন। শিব সতীকে পিত্ৰালয়ে যেতে পুনঃ পুনঃ নিষেধ করতে লাগলেন। সতী রাগে অগ্নিমূৰ্ত্তি হয়ে অট্টহাসি করতে করতে ভীষণা রূপে আবির্ভূত হলে শিব। ভয়ে পালাতে চেষ্টা করলেন। কিন্তু দশদিকে দশভীষণ মুৰ্ত্তি দেখে যাওয়ার রাস্তা না পেয়ে ভীতি বিহবল সুরে “তোমরা কারা, আমার সতী কোথায়’, জানতে চাইলেন। তখন সতী উত্তর দিলেন, “আমি তোমার সতী, এ ভীষণা দশরূপ আমারই প্রকাশ। হে শান্তু ভয় পেয়াে না।” শিব বললেন “তুমি সতী হলে পূর্বের রূপে ফিরে আসা। তুমি সতী হলে কৃষ্ণ বর্ণ কেন? এমন ভয়প্রদা কেন? এরা কারা? সতী বললেন ‘এঁরা সকলেই মহাবিদ্যা সমপ্ৰভা যুক্তা। এদের নাম বলছি, হে মহেশ্বর শ্ৰবণ করুন (১) কালী (২) তারা (৩) ষোড়শী। (৪) ভূবনেশ্বরী (৫) ভৈরবী (৬) ছিন্নমস্তা (৭) ধূমাবতী (৮) বগলা (৯) মাতঙ্গী (১০) কমলা।” বৃহৎ তন্ত্রসারে শ্ৰীশ্ৰী দশমহাবিদ্যার নামে শ্লোকঃ

কালীতারা মহাবিদ্যা ষোড়শী ভূবনেশ্বরী,
ভৈরবী ছিন্নমস্তা চ বিদ্যা ধূমাবতী তথা ।
বগলা সিদ্ধবিদ্যা চ মাতঙ্গী কমলাতিন্ত্রকা
এতাদশ মহাবিদ্যা সিদ্ধবিদ্যা প্রকীৰ্ত্তিতা!>


ভগবতী কালীকেই নীলবরণা হওয়ায় তারাও বলা হয়। আবার কোনও মতে তারা নামের রহস্য এই যে ইনি সর্বদা মোক্ষদায়িনী, তারিনী, তাই তাকে তারা নামে ডাকা হয়। মহাবিদ্যার মধ্যে এর স্থান দ্বিতীয়। বিনা আয়াসেই বাকশক্তি প্রদানে সমর্থ, এইজন্য একে নীলসরস্বতীও বলা হয়। ভয়ানক বিপদ থেকে ভক্তকে রক্ষা করেন এজন্য তিনি উগ্ৰতারা। বৃহনীল-তন্ত্ৰাদি শাস্ত্রে ভগবতী তারার স্বরূপের বিশদ আলোচনা আছে।

[…]

মাহেশ্বরী শক্তির সবচেয়ে সুন্দর শ্ৰীবিগ্রহধারিণী সিদ্ধ দেবী হলেন ষোড়শী। মহাবিদ্যার মধ্যে এর স্থান তৃতীয়। ষোড়শ অক্ষরের মন্ত্রময়ী এই দেবীর অঙ্গপ্রভা নবারুনের আভার মত। তার চার হাত এবং ত্রিনয়ন। ইনি শায়িত সদাশিবের ওপর কমলাসনে শান্তমুদ্রায় আসীন। এর চার হতে ক্ৰমশঃ পাস, অঙ্কুশ, ধনুক এবং বাণ শোভিত রয়েছে। বর দেবার জন্য সদাই উৎসুক ভগবতীর এই শ্ৰীবিগ্ৰহ সৌম্যমূর্তি এবং হৃদয় দয়ায় পূর্ণ।

[…]

দেবীভাগবতে বর্ণিত মনিদ্বীপের অধিষ্ঠাত্রী শ্ৰীশ্ৰীচণ্ডীর একাদশ অধ্যায়ে মঙ্গলাচরণেও বলা হয়েছে যে ‘আমি ভুবনেশ্বরী দেবীর ধ্যান করি। তাঁর শ্ৰীঅঙ্গের শোভা নবারুন সদৃশ অরুনাভ। তাঁর শিরে চন্দ্রমুকুট, ত্রিনয়না দেবীর শ্ৰীমুখে মৃদু হাসির আভা । তার হাতে পাশ, অঙ্কুশ, বরদ এবং অভয় মুদ্রা শোভা পায়।”

[…]

পরিবর্তনশীল জগতের অধিপতি হচ্ছেন। কবন্ধ আর কবন্ধের শক্তি হলেন ছিন্নমস্তা। বিশ্বের হাস-বৃদ্ধি তাে সর্বদা হয়েই চলেছে। হাসের মাত্রা যখন কম এবং বিকাশের মাত্রা বেশী হয় তখন ভুবনেশ্বরীর আর্বিভাব | হয়। এর বিপরীত প্রক্রিয়ায় অর্থাৎ নিৰ্গম বেশী এবং আগম কম হলে ছিন্নমস্তার প্রাবল্য হয়।

[…]

ধূমাবতী দেবী মহাবিদ্যাদের মধ্যে সপ্তম স্থানে আছেন বলে মনে করা হয়। এর সম্বন্ধে কাহিনীতে বলা হয়েছে যে একসময় ভগবতী পার্বতী ভগবান শিবের সাথে কৈলাস পর্বতে বসেছিলেন। মহাদেবের কাছে তিনি তার ক্ষুধার কথা জানালেন এবং ক্ষুধা নিবারণের অনুরোধ জানালেন।

[…]

বগলামুখী ব্যাষ্টিরূপে শত্রুনাশের ইচ্ছাযুক্তা এবং সমষ্টিরূপে পরমাত্মার সংহারশক্তিই হলেন বগলা।। পীতাম্বরাবিদ্যা নামে বিখ্যাত বগলামুখীর সাধনা প্রায়শই শত্রুভিয়মুক্তি ও বাকসিদ্ধি লাভের জন্য করা হয়। এর পূজায় হরিদ্রােমালা, পীতপুস্প এবং পীতবস্ত্রের বিধান আছে। মহাবিদ্যাগণের মধ্যে এর স্থান অষ্টম। এর ধ্যানে বলা হয় যে সুধাসমুদ্রের মধ্যে অবস্থিত মনিময় মণ্ডপে রত্নময় সিংহাসনে তিনি বিরাজ করেন। তিনি পীতবর্ণ বস্ত্ৰ, পীত আভুষন এবং হলুদ ফুলের মালা পরিধান করেন। এর এক হাতে শত্রুর জিহ্বা এবং অন্য হাতে মুগুর রয়েছে।

[…]