শিবের নাম মাতঙ্গ, তার শক্তি মাতঙ্গী।

তিনি অসুরদের মােহিত্যকারিনী আর ভক্তকে অভীষ্ট ফলদায়িনী। গৃহস্থ জীবনে সুখদায়িনী, পুরুষাৰ্থসিদ্ধি এবং বাকবিলাসে পারঙ্গম হওয়ার জন্য মাতঙ্গিনীর সাধনা শ্রেয়। দশমহাবিদ্যার মধ্যে এর স্থান নবম |

শিবের নাম মাতঙ্গ, তার শক্তি মাতঙ্গী। মাতঙ্গীর ধ্যানে তার রূপের বর্ণনায় আছে যে তিনি শ্যমবৰ্ণা, তার শিরে অৰ্দ্ধচন্দ্ৰশোভিত। দেবী মাতঙ্গী ত্রিনয়না, রত্নসিংহাসনে আসীনা, তার কান্তি নীলকমলের মত এবং বিস্তৃত অরণ্য সদৃশ্য রাক্ষসকুলকে ভস্ম করতে দাবানলের ন্যায়। তার চার হাতে পাশ, অঙ্কুশ, খেটক ও খড়গ

শোভিত। তিনি অসুরদের মােহিত্যকারিনী আর ভক্তকে অভীষ্ট ফলদায়িনী। গৃহস্থ জীবনে সুখদায়িনী, পুরুষাৰ্থসিদ্ধি এবং বাকবিলাসে পারঙ্গম হওয়ার জন্য মাতঙ্গিনীর সাধনা শ্রেয়। দশমহাবিদ্যার মধ্যে এর স্থান

নবম | ് নারদপঞ্চরাত্রের দ্বাদশ অধ্যায়ে শিবকে চণ্ডাল এবং শিবাকে উচ্ছিষ্ট চণ্ডালী নামে বলা হয়েছে। এরই নাম মাতঙ্গ। পুরাকালে মাতঙ্গ নামে এক ঋষি নানা বৃক্ষশোভিত কদম্ববনে সমস্ত প্রাণীকে বশ করার সংকল্প নিয়ে ভগবতী ত্রিপুরাদেবীকে তুষ্ট করার জন্য কঠোর তপস্যা করেছিলেন। সেই সময় ত্রিপুরাদেবীর নেত্র থেকে উৎপন্ন তেজঃপুঞ্জ এক শ্যামলা নারীবিগ্রহের রূপ ধারণ করে। তার নাম হয় রাজমাতঙ্গিনী। ইনি দক্ষিণ ও পশ্চিম আমায়ের দেবী। রাজমাতঙ্গ, সুমুখী, বশ্যমাতঙ্গী ও কর্ণমাতঙ্গ এর অন্যান্য নাম। মাতঙ্গার ভৈরবের নাম মাতঙ্গ। ব্ৰহ্মযামল তন্ত্রে একে মাতঙ্গ মুনির কন্যা বলা হয়েছে।

দশমহাবিদ্যার মধ্যে মাতঙ্গীর উপাসনা বাকসিদ্ধির জন্য বিশেষভাবে উপযুক্ত। পূরশ্চর্যাের্নবে বলা হয়েছে—

অক্ষাবক্ষ্যে মহাদেবীং মাতঙ্গীং সৰ্বসিদ্ধিদাম । অস্যাঃ সেবনমাত্রেণ বাকসিদ্ধিং লভতে ধ্রুবম৷

তঙ্গীর স্থূলক্কপের প্রতীকনিয়মাদি পর্যালোচনা করলে ভালোভাবেই বােঝা যায় যে ইনি পূর্ণ বাগদেবতারই মূর্তি। মাতঙ্গীর শ্যামবর্ণ হল পরাবাক বিন্দু। তাঁর ত্রিনয়ন হলেন সূর্য, চন্দ্র আর অগ্নি। তার চার বাহু চারটি বেদ। পাশ হল অবিদ্যা, অঙ্কুশ হল বিদ্যা, কর্মরাশি হল দণ্ড, শব্দ স্পর্শদি গুন হল কৃপাণ অর্থাৎ পঞ্চভূতাত্মক সৃষ্টির প্রতীক। কদম্ববন হল ব্ৰহ্মাণ্ডের প্রতীক। যোগরাজোপনিষদে ব্ৰহ্মলোককে কদম্বের মত গোলাকৃতিরূপে বর্ণনা করা হয়েছে— ‘কদম্বগোলকাকারং ব্ৰহ্মলোকং ব্ৰজন্তি তে। ভগবতী মাতঙ্গীর সিংহাসন শিবাত্মক মহামঞ্চ অথবা ত্রিকোন সূক্ষরূপে তাঁর মূর্তি হল। যন্ত্র আর পররূপে বা স্কুলারুপে শুধুমাত্র ভাবনা বা চিন্তন |

শ্ৰীশ্ৰীচণ্ডীর সপ্তম অধ্যায়ে মাতঙ্গীদেবীর ধ্যানে বলা হয়েছে যে তিনি রত্নময় সিংহাসনে বসে কাকাতুয়ার মধুর শব্দ শুনছেন। তিনি শ্যামবর্ণা। তিনি তার একটি পা পদ্মের ওপর রেখেছেন। তার শিরে অৰ্দ্ধচন্দ্র এবং গলায় কলহার ফুলের মালা পরে রয়েছেন। বীনা বাদনরতা দেবী মাতঙ্গীর পরিধানে সুবদ্ধ চােলি সুশোভিত। তিনি রক্তবর্ণ শাড়ী পরিহিতা আর হাতে শঙ্খপাত্র ধরে আছেন, তার মুখমণ্ডলে মধুপানের মৃদু আভা এবং ললাটে সুন্দর টিপ শোভা পাচ্ছে। এর বল্লকী (বীণা) ধারণ নাদের প্রতীক। কাকাতুয়ার পড়া গ্ৰহীং’ বর্ণের উচ্চারণ বীজমন্ত্রের প্রতীক। পদ্মফুল হচ্ছে বর্ণাত্মক সৃষ্টির প্রতীক। শঙ্খপাত্র হল ব্ৰহ্মরন্ধ এবং মধু অমৃতের প্রতীক | রক্তবর্ণ শাড়ী অগ্নি অথবা জ্ঞানের প্রতীক। বাগদেবীর অর্থে মাতঙ্গী যদি ব্যাকরণ রূপ হন তো শুকপাখী হল শিক্ষার প্রতীক। চার হাত চার বেদের প্রতীক। এভাবে তান্ত্রিকদের ভগবতী মাতঙ্গী মহাবিদ্যা, বৈদিকদের সরস্বতীই। তন্ত্রশাস্ত্রে এর পূজার বিস্তারিত বর্ণনা আছে।

পরবর্তী তালিকা :

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।