মাহেশ্বরী শক্তির সবচেয়ে সুন্দর শ্ৰীবিগ্রহধারিণী সিদ্ধ দেবী হলেন ষোড়শী।

মহাবিদ্যার মধ্যে এর স্থান তৃতীয়। ষোড়শ অক্ষরের মন্ত্রময়ী এই দেবীর অঙ্গপ্রভা নবারুনের আভার মত। তার চার হাত এবং ত্রিনয়ন। ইনি শায়িত সদাশিবের ওপর কমলাসনে শান্তমুদ্রায় আসীন। এর চার হতে ক্ৰমশঃ পাস, অঙ্কুশ, ধনুক এবং বাণ শোভিত রয়েছে। বর দেবার জন্য সদাই উৎসুক ভগবতীর এই শ্ৰীবিগ্ৰহ সৌম্যমূর্তি এবং হৃদয় দয়ায় পূর্ণ।

মাহেশ্বরী শক্তির সবচেয়ে সুন্দর শ্ৰীবিগ্রহধারিণী সিদ্ধ দেবী হলেন ষোড়শী। মহাবিদ্যার মধ্যে এর স্থান তৃতীয়। ষোড়শ অক্ষরের মন্ত্রময়ী এই দেবীর অঙ্গপ্রভা নবারুনের আভার মত। তার চার হাত এবং ত্রিনয়ন। ইনি শায়িত সদাশিবের ওপর কমলাসনে শান্তমুদ্রায় আসীন। এর চার হতে ক্ৰমশঃ পাস, অঙ্কুশ, ধনুক এবং বাণ শোভিত রয়েছে। বর দেবার জন্য সদাই উৎসুক ভগবতীর এই শ্ৰীবিগ্ৰহ সৌম্যমূর্তি এবং হৃদয় দয়ায় পূর্ণ। যিনি এর শরণ গ্রহণ করেন, ঈশ্বর ও তাঁর মধ্যে কোনও প্রভেদ থাকে না। এর মহিমা সত্যিই অবর্ণনীয়। সংসারের সব মন্ত্ৰ-তন্ত্র এর আরাধনা করে। বেদ ও এর বর্ণনা করতে পারে না। ভক্তের প্রতি প্ৰসন্না হয়ে অভীষ্ট তো সামান্য কথা, ইনি সব কিছুই প্রদান করেন।

প্রশান্ত হিরন্যগর্ভই শিব আর তারই শক্তি হচ্ছে ষোড়শী। তন্ত্রশাস্ত্ৰে ষোড়শী দেবীকে পঞ্চবক্তা অর্থাৎ পাঁচটি আননযুক্ত বলে বর্ণনা করা হয়েছে। চারদিকে চারটি আর উদ্ধে একটি মুখ হওয়াতে একে পঞ্চবক্তা বলা হয়েছে। দেবীর পাঁচটি মুখ তৎপুরুষ, সদ্যোজাত, বামদেব, অঘোর ও ঈশান।— শিবের এই পাচ রূপের প্রতীক। পাচ দিকের রং ক্রমশঃ সবুজ, রক্ত (লাল), ধূম্র (কৃষ্ণ), নীল ও পীত হওয়াতে পাঁচটি মুখও ওই রংয়েরই। দেবীর দশ হাতে যথাক্রমে অভয়, টঙ্ক, শূল, বীজ, পাশ, খড়গ, অঙ্কুশ, ঘন্টা, সৰ্প ও অগ্নি রয়েছে। ইনি ষোলকলায় পূর্ণরূপে বিকশিত হওয়াতে একে ষোড়শী বলা হয়।

ষোড়শীকে শ্ৰীবিদ্যাও বলা হয়। এর ললিতা, রাজরাজেশ্বরী, মহাত্রিপুরসুন্দরী বালপঞ্চদশী ইত্যাদি অনেক নাম আছে। একে আদ্যাশক্তি বলা হয়। অন্যান্য মহাবিদ্যা দ্বারা ভোগ অথবা মোক্ষ-এর মধ্যে যে কোনও একটিই পাওয়া যায়। ইনি তার উপাসককে ভুক্তি এবং মুক্তি দুই প্ৰদান করেন। এর চারটি রূপ যথা—স্কুল, সূক্ষ্ম, পর ও তুরীয়।

একদা পরাম্বা পার্বতী ভগবান শিবকে প্রশ্ন করেন—“হে ভগবন! আপনার দ্বারা প্রকাশিত তান্ত্রিক সাধনাতে জীবের আধি ব্যাধি, শোক-সন্তাপ, দীনতা-হীনতা, তাে দূর হবে কিন্তু জন্ম ও মৃত্যুর অসহনীয় দুঃখের নিবৃত্তি তাে হবে না। অনুগ্রহ করে এই দুঃখের নিবৃত্তি এবং মােক্ষপদ প্রাপ্তির উপায় বলুন। পরম কল্যানময়ী পরাম্বার অনুরোধে ভগবান শঙ্কর ষোড়শী শ্ৰীবিদ্যা-সাধন-প্ৰণালী ব্যক্ত করেন। আচার্য শঙ্করাচার্যও শ্ৰীবিদ্যারূপে এই ষোড়শী দেবীর উপাসনা করেছিলেন। এইজন্য আজ পর্যন্ত সমস্ত শঙ্কর পীঠসমূহে ভগবতী ষোড়শী রাজরাজেশ্বরী। ত্রিপুরাসুন্দরীর শ্ৰীযন্ত্রের রূপে পূজা চলে আসছে। আচার্য শঙ্করাচার্য তাঁর রচিত “সৌন্দর্যলহরী তে ষোড়শী শ্ৰীবদ্যার স্তুতি প্রসঙ্গে বলেছেন যে ‘অমৃতসমুদ্রের মধ্যে একটি মণির দ্বীপ আছে, যেখানে কল্পবৃক্ষের সারি রয়েছে, নবরত্বের নয়টি প্রকোষ্ঠ আছে; সেই বনে চিন্তামণি দ্বারা নির্মিত এক মহলে ব্ৰহ্মময় সিংহাসন আছে, পঞ্চকৃত্যের দেবতা ব্ৰহ্মা, বিষ্ণু, রুদ্র এবং ঈশ্বর সেই সিংহাসনের পায়া আর সদাশিব হচ্ছেন ফলক (সূক্ষ্মাগ্র মুখ)। সদাশিবের নাভিদেশ থেকে উদ্ভূত পদ্মের ওপর বিরাজমানা ভগবতী। ষোড়শী ত্রিপুরাসুন্দরীকে যে ধ্যান করে, সে ধন্য। ভগবতীর আশীর্বাদে ভুক্তি আর মুক্তি দুটােই অতি সহজেই

পরবর্তী তালিকা :

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।