ধূমাবতী দেবী মহাবিদ্যাদের মধ্যে সপ্তম স্থানে আছেন বলে মনে করা হয়।

এর সম্বন্ধে কাহিনীতে বলা হয়েছে যে একসময় ভগবতী পার্বতী ভগবান শিবের সাথে কৈলাস পর্বতে বসেছিলেন। মহাদেবের কাছে তিনি তার ক্ষুধার কথা জানালেন এবং ক্ষুধা নিবারণের অনুরোধ জানালেন।

ধূমাবতী দেবী মহাবিদ্যাদের মধ্যে সপ্তম স্থানে আছেন বলে মনে করা হয়। এর সম্বন্ধে কাহিনীতে বলা হয়েছে যে একসময় ভগবতী পার্বতী ভগবান শিবের সাথে কৈলাস পর্বতে বসেছিলেন। মহাদেবের কাছে তিনি তার ক্ষুধার কথা জানালেন এবং ক্ষুধা নিবারণের অনুরোধ জানালেন। কয়েকবার বলার পরেও যখন ভগবান শিব সে কথায় কান দিলেন না, তখন তিনি মহাদেবকেই তুলে নিয়ে গিলে ফেললেন। তাঁর শরীর থেকে ধূমরাশি বের হতে লাগল। তখন ভগবান শঙ্কর পার্বতীকে বললেন “তোমার সুন্দর চেহারাখানা ধোঁয়ায় ঢেকে যাওয়ায় তোমাকে ধূমাবতী বা ধূম্রা বলে ডাকা হবে।” ধূমাবতী মহাশক্তি একলা এবং স্বয়ং নিয়ন্ত্রিতা। তার কোনও স্বামী বা প্ৰভু নেই। এইজন্য তাকে বিধবাররূপে চিন্তা করা হয়। দুর্গাসপ্তশতী অনুসারে ইনিই সেই প্রতিজ্ঞা করেছিলেন যে “যে আমাকে যুদ্ধে পরাস্ত করে আমার গর্ব চূৰ্ণ করবে, সেই আমার পতি হবে। সেই প্রতিজ্ঞ কেউ ভাঙ্গতে পারেনি, তাই তিনি কুমারী, ধন বা পতি না থাকাতে অথবা নিজের স্বামী মহাদেবকে গিলে ফেলায় ইনি বিধবা ।

নারদপাঞ্চরাত্র অনুযায়ী ইনি নিজ শরীর থেকে উগ্ৰচণ্ডিকাকে প্রকাশিত করেছিলেন যিনি শত শত শকুনের মত আওয়াজ করতেন। শিবকে গিলে ফেলার অর্থ হল তার স্বামিত্কে অস্বীকার। অসুরদের কাচা মাংসে তার অঙ্গভূত শৃগালেরা তৃপ্ত হল, এটাই হল এর ক্ষুধার তত্ত্ব। ধোেয়রূপে ইনি বিবর্ণ, চঞ্চল, কৃষ্ণবর্ণা, অপরিচ্ছন্ন বস্ত্র পরিহিতা, মুক্তকেশী, বিধবা, কাক ধ্বজ চিহ্নিত রথারূঢ়া, হাতে কুলা, ক্ষুধা-পিপাসায় ব্যাকুল মুখ, চােখদুটি নির্মম দৃষ্টিদায়িনী। স্বতন্ত্রতন্ত্র অনুসারে সতীদেবী যখন দক্ষযজ্ঞে যোগাগ্নিতে নিজেকে ভস্মীভূত | করেছিলেন, তখন সেই অগ্নি থেকে যে ধোঁয়া বেরিয়েছিল তার থেকেই ধূমাবতীবিগ্রহ প্রকট হয়েছিল।

ধূমাবতীর উপাসনা বিপদনাশ, রোগমুক্তি, যুদ্ধজয়, উচাটন ও মারণাদি কর্মে সিদ্ধিলাভের জন্য হয়। শাক্তপ্রমোদে বর্ণনা আছে যে এর উপাসকের উপর অশুভ ক্ষতিকারক ক্রিয়ার কোনও প্রভাব পড়েনা । সং রোগ দুঃখের অধিপতি হচ্ছেন চার দেবতা। জুর, উন্মাদ ও প্রদাহ হয় রূদ্রের কোপে, মৃচ্ছা, বিকলাঙ্গতা যমের কোপে, ধূলি (ধূসরতা-রূক্ষ-কৰ্কশতা), গ্রন্থিরোগ (গাটফোলা) শক্তিলোপ বা কোন অঙ্গ অবশ হয়ে যাওয়া-পক্ষাঘাত বিরুণের কোপে এবং শোক, কলহ, ক্ষুধা, তৃষ্ণা ইত্যাদি নির্ধতির কোপের দরুন হয়। শতপথব্রাহ্মন অনুসারে ধূমাবতী ও নির্ধতি একই। ইনি লক্ষ্মীর জ্যেষ্ঠা, তাই জ্যেষ্ঠা নক্ষত্রে জন্মান মানুষ | আজীবন দুঃখভোগ করে।

তন্ত্রগ্রন্থ অনুসারে ধূমাবতী আর উগ্ৰতারা একই, ধূম্রা হওয়ার জন্য ধূমাবতী নাম। শ্ৰীশ্ৰীচণ্ডীতে বাভ্রবী ও | তামসী নামে এর ব্যাখান আছে। ইনি তুষ্ট হলে রোগ এবং শোক নাশ করেন আর কুপিত হলে সমস্ত সুখ | ঐশ্বর্য এবং ঈন্সিত বস্তু নষ্ট করে দেন। এর শরনাগতি নিলে বিপত্তিনাশ এবং সম্পত্তি প্রাপ্তি হয়। ঋগ্বেদের | রাত্রিসূক্তে একে নাম দেওয়া হয়েছে ‘সুতরা’। সুতরার অর্থ সুখপূর্বক তারণের উপযুক্ত। তারা বা তারিনী এর | পূৰ্বরূপ বলে মনে করা হয়। এইজন্য আগমশাস্ত্ৰে অভাব ও সঙ্কট নাশ করে সুখদায়িনী বিভূতিরূপে ইনি |

পরবর্তী তালিকা :

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।