বগলামুখী

ব্যাষ্টিরূপে শত্রুনাশের ইচ্ছাযুক্তা এবং সমষ্টিরূপে পরমাত্মার সংহারশক্তিই হলেন বগলা।। পীতাম্বরাবিদ্যা নামে বিখ্যাত বগলামুখীর সাধনা প্রায়শই শত্রুভিয়মুক্তি ও বাকসিদ্ধি লাভের জন্য করা হয়। এর পূজায় হরিদ্রােমালা, পীতপুস্প এবং পীতবস্ত্রের বিধান আছে। মহাবিদ্যাগণের মধ্যে এর স্থান অষ্টম। এর ধ্যানে বলা হয় যে সুধাসমুদ্রের মধ্যে অবস্থিত মনিময় মণ্ডপে রত্নময় সিংহাসনে তিনি বিরাজ করেন। তিনি পীতবর্ণ বস্ত্ৰ, পীত আভুষন এবং হলুদ ফুলের মালা পরিধান করেন। এর এক হাতে শত্রুর জিহ্বা এবং অন্য হাতে মুগুর রয়েছে।

ব্যাষ্টিরূপে শত্রুনাশের ইচ্ছাযুক্তা এবং সমষ্টিরূপে পরমাত্মার সংহারশক্তিই হলেন বগলা।। পীতাম্বরাবিদ্যা নামে বিখ্যাত বগলামুখীর সাধনা প্রায়শই শত্রুভিয়মুক্তি ও বাকসিদ্ধি লাভের জন্য করা হয়। এর পূজায় হরিদ্রােমালা, পীতপুস্প এবং পীতবস্ত্রের বিধান আছে। মহাবিদ্যাগণের মধ্যে এর স্থান অষ্টম। এর ধ্যানে বলা হয় যে সুধাসমুদ্রের মধ্যে অবস্থিত মনিময় মণ্ডপে রত্নময় সিংহাসনে তিনি বিরাজ করেন। তিনি পীতবর্ণ বস্ত্ৰ, পীত আভুষন এবং হলুদ ফুলের মালা পরিধান করেন। এর এক হাতে শত্রুর জিহ্বা এবং অন্য হাতে মুগুর রয়েছে।
স্বতন্ত্রতন্ত্ৰ মতে ভগবতী বগলামুখীর আবির্ভাবের কাহিনীটা এইরকম—
সত্যযুগে সমগ্র বিশ্ব ধ্বংস করার জন্য এক ভীষন ঝড় ওঠে। প্রাণীসমূহের জীবনে আগত সংকট দেখে ভগবান মহাবিষ্ণু চিন্তান্বিত হলেন। তিনি সৌরাষ্ট্র দেশে হরিদ্র সরোবরে গিয়ে ভগবতীকে প্রসন্ন করার জন্য তপস্যা করতে লাগলেন। শ্ৰীবিদ্যা ওই সরোবরে বগলামুখীরূপে আবির্ভূত হয়ে তাঁকে দর্শন দেন এবং বিশ্বধ্বংসকারী ঝড়কে তৎক্ষণাৎ রোধ করে দিলেন। বগলামুখী মহাবিদ্যা ভগবান বিষ্ণুর তেজের সঙ্গে মিলিত হওয়াতে তিনি বৈষ্ণবী। মঙ্গলবার চতুর্দশীর মধ্যরাত্রে তিনি আবির্ভূত হন। ইহার পূজনের উদ্দেশ্য হল দৈবী প্রকোপ শান্তি, ধনধান্য লাভের জন্য নির্দিষ্ট কর্ম এবং আভিচারিক কর্ম ইত্যাদি | এই সব আপাতপ্রভেদ শুধুমাত্র উদ্দেশ্যের ভিন্নতার জন্য; নতুবা এর পূজা-উপাসনা ভোগ এবং মোক্ষ লাভ উভয়ের জন্যই করা হয়।
যজুর্বেদের কাঠকসংহিতানুসারে দশদিক প্রকাশিনী, সুন্দর স্বরূপধারিনী “বিষ্ণুপত্নী” কে ত্ৰিলোকের ঈশ্বরীরূপে মানা হয়। স্তম্ভনকারিনী শক্তি ব্যক্ত ও অব্যক্ত সমস্ত পদার্থের স্থিতির আধার পৃথিবীরূপে শক্তি। বগলা সেই স্তম্ভনশক্তির অধিষ্ঠাত্রী দেবী। শক্তিরূপিনী বগলার স্তম্ভন শক্তিতে দু্যলোক বৃষ্টি বর্ষন করে। তাঁর দ্বারাই আদিত্যমণ্ডলের অবস্থান এবং তাঁহাতেই স্বৰ্গলোকও স্তম্ভিত রয়েছে। ভগবান শ্ৰীকৃষ্ণ ও গীতায় “বিষ্টভ্যাহমিদং
কৃৎক্সমেকাংশেন স্থিতাে জগৎ’ বলে সেই শক্তির সমর্থন করেছেন। তন্ত্রে সেই স্তম্ভনশক্তিকে বগলামুখী নামে
বলা হয়েছে।
শ্ৰীবগলামুখীকে ব্ৰক্ষাস্ত্ৰ’ নামেও বলা হয়। ঐহিক বা পারলৌকিক, দেশ অথবা সমাজে দুঃখদায়ী অরিষ্টাদিকে দমন এবং শত্রুনাশে বগলামুখীর মত আর কোন মন্ত্র নেই। সাধকেরা চিরকাল এই মহাদেবীর আশ্রয় নিয়ে আসছেন। এর পাঁচটি মন্ত্রপ্রভেদ-বড়বামুখী, জািতবেদমুখী, উল্কামুখী, জ্বালামুখী ও বৃহদভানুমুখী | কুণ্ডিকাতন্ত্রে বগলামুখী জপের বিধানের ওপর বিশেষ আলোকপাত করা হয়েছে। মুণ্ডমালাতন্ত্রে তো এও বলা হয়েছে যে, এর সিদ্ধিলাভের জন্য নক্ষত্ৰাদি বিচার ও কালশোধনেরও প্রয়োজন নেই।
বগলা মহাবিদ্যা উদ্ধােম্নায় অনুসারেই উপাস্য। এই আমায়ে শক্তি কেবল পূজ্য বলে মনে করা হয়, ভোগ্য নয়। শ্ৰীকুলের সমস্ত মহাবিদ্যার উপাসনা সফলতা অর্জন না করা পর্যন্ত সতর্কভাবে গুরুর সান্নিধ্যে থেকে করে যাওয়া উচিত। ব্ৰহ্মচর্য পালন এবং অন্তর ও বাহিরের শুচিতা অতীব আবশ্যক। ব্ৰহ্মাই সর্বপ্রথম বগলা মহাবিদ্যার উপাসনা করেন। ব্ৰহ্মা এই বিদ্যার উপদেশ দেন সনকাদি মুনিদের, সনৎকুমার দেবর্ষি নারদকে এবং নারদ সাংখ্যায়ন নামক পরমহংসকে এই জ্ঞানের উপদেশ দেন, সংখ্যায়ন ছত্রিশ খণ্ডে উপনিবদ্ধ বগলাতন্ত্র রচনা করেন। বগলামুখীর দ্বিতীয় উপাসক ভগবান বিষ্ণু এবং তৃতীয় উপাসক পরশুরাম এবং পরশুরাম এই বিদ্যা আচার্য দ্ৰোণকে উপদেশ করেন।

পরবর্তী তালিকা :

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।