পরিবর্তনশীল জগতের অধিপতি হচ্ছেন। কবন্ধ আর কবন্ধের শক্তি হলেন ছিন্নমস্তা। বিশ্বের হাস-বৃদ্ধি তাে সর্বদা হয়েই চলেছে। হাসের মাত্রা যখন কম এবং বিকাশের মাত্রা বেশী হয় তখন ভুবনেশ্বরীর আর্বিভাব | হয়। এর বিপরীত প্রক্রিয়ায় অর্থাৎ নিৰ্গম বেশী এবং আগম কম হলে ছিন্নমস্তার প্রাবল্য হয়।
দেবী ছিন্নমস্তার স্বরূপ অত্যন্তই গুহ্য। এটি কোনও অধিকারী সাধকই জানতে পারে। মহাবিদ্যাদের মধ্যে ত্রর | স্থান ৬ষ্ঠ । এর প্রাদুর্ভাবের কাহিনী হল—একবার দেবী ভবানী তাঁর সহচরী জয়া ও বিজয়াকে নিয়ে | মন্দাকিনীতে স্নান করতে গিয়েছিলেন। স্নানান্তে ক্ষুধায় কাতার হয়ে তিনি কৃষ্ণবর্ণ হয়ে গেলেন। তাঁর সহচরীরাও তার কাছে খাবার চাইল। দেবী তাদের একটু প্রতীক্ষা করতে বললেন। কিছুক্ষণ প্রতীক্ষা করার পর সহচরীরা যখন আবার খেতে চাইল তখন দেবীকে বলল— ‘মা তো নিজের শিশুদের ক্ষুধা পেলে অবিলম্বে খেতে দেয়। আপনি আমাদের কেন উপেক্ষা করছেন?— নিজের সখীদের বিনীত আবেদন শুনে কৃপাময়ী | দেবী নিজের খড়গ দিয়ে নিজের মুণ্ড কেটে ফেললেন। কাটা মুণ্ডটা দেবীর বা হাতে এসে পড়ল এবং তার কবন্ধের রক্তপ্রবাহ তিনটী ধারায় প্রবাহিত হল। দুই সখীর দিকে তিনি রক্তের দুটী ধারা ঘুরিয়ে আর সেই রক্ত পান করে সখীরা খুশী হল। তৃতীয় ধারার রক্ত দেবী নিজেই পান করতে লাগলেন। সেই থেকেই দেবী ছিন্নমস্ত নামে প্রসিদ্ধ হলেন ।
এইরকম বিধান আছে যে অৰ্দ্ধারাত্রে অর্থাৎ চতুর্থসন্ধ্যাকালে (ছয় ঘন্টার অন্তর দিন রাত্রির সন্ধিক্ষণকে সন্ধ্যা বলে) ছিন্নমস্তার উপাসনা করলে সাধক সরস্বতী-সিদ্ধ হয়। শত্রুবিজয়, সম্পূর্ণ-স্তম্ভন, রাজ্য প্রাপ্তি এবং দুর্লভ মোক্ষপ্রাপ্তির উদ্দেশ্যে ছিন্নমস্তার পূজা অমােঘ ফলদায়ী। ছিন্নমস্তার আধ্যাত্মিক স্বরূপ অত্যন্ত মাহাত্ম্যপূর্ণ। ছিন্ন যজ্ঞশীর্ষের প্রতীক এই দেবী শ্বেতপদ্মের উপর দণ্ডায়মানা। চতুর্দিক তাঁর বসন, তার নাভিদেশে যোনিচক্র অধিষ্ঠান। কৃষ্ণ (তমঃ) এবং রক্ত (রজঃ) গুণের দেবী দু’জন তাঁর সখী। তিনি নিজের মাথা কেটে ফেলেও জীবিত থাকেন। এটি নিজেতেই নিজের অন্তরমুখী সাধনার পরিচয় প্রদান করে।
পণ্ডিতেরা এটির দ্বারা সিদ্ধির চরমপ্রাপ্তি জ্ঞান করেন। যোগশাস্ত্রে তিনটি গ্রন্থির উল্লেখ আছে, সেই গ্রন্থিগুলির সম্পূর্ণ ভেদনে সাধকের পূর্ণ সিদ্ধিপ্রাপ্তি হয়। এই তিন গ্ৰন্থির নাম ব্ৰহ্মগ্রন্থি, বিষ্ণুগ্রন্থি ও রুদ্রগস্থি। মূলাধারে ব্ৰহ্মগ্রন্থি, মণিপুরে বিষ্ণুগন্থি এবং আজ্ঞাচক্রে রুদ্রগস্থির অধিষ্ঠান। এই তিনটি গ্রন্থিভেদ হবার পরেই অদ্বৈতানন্দ প্রাপ্তি হয়। যোগীদের মতে মনিপুর চক্রের নীচের নাড়ীতেই কাম এবং রতির মূল, তার উপরেই ছিন্না মহাশক্তি আরূঢ়া আছেন, এই মহাশক্তির উদ্ধপ্রবাহ হলেই রুদ্রগ্রন্থি ভেদ হয়।
ছিন্নমস্তার বাজ বৈরোচনী নামটি শাক্ত, বৌদ্ধ তথা জৈনধর্মাবলম্বীদের মধ্যে সমানভাবে প্রচলিত। দেবীর দুই সখী তমােগুন ও রজোগুণের প্রতীক, পদ্মফুল হচ্ছে বিশ্বপ্ৰপঞ্চ আর কামরতি হল চিদানন্দের স্কুলবৃত্তি। | বৃহদারন্যকের অশ্বশির-বিদ্যা, শাক্তের গ্রীব-বিদ্যা এবং গানপত্যদের ছিন্ন শীর্ষ গনপতি রহস্যও ছিন্নমস্তারই